ইন্ডিয়া চিকিৎসায় বেশির ভাগ ভেলরে সিএমসি হসপিটালে গিয়ে থাকেন। এই হসপিটাল তাদের সাধারণ ধারণ ক্ষমতার তিন গুন পেশেন্ট কে চিকিৎসা সেবা দিয়ে থাকেন তাই এই হসপিটালের সবচেয়ে বড় সমস্যা হল ডাক্তারের এপয়েন্টমেন্ট পাওয়া। বেশিরভাগ রোগি এপয়েন্টমেন্ট ছাড়াই চলে যাবার কারনে ওখানে গিয়ে ডাক্তারের এপয়েন্টমেন্ট পেতে ১৫-২০ দিন পর্যন্ত লেগে যায়। যার কারনে অল্প সময়ে ট্রিটমেন্ট শেষ করতে পারেন না।
তাই ভেলরে যাওয়ার আগে ডাক্তারের এপয়েন্টমেন্ট বুক করে যাওয়াটাই ভালো। এতে সময় ও টাকা দুটোই সাশ্রয় হয়। আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন সিএমসি হসপিটালের যেকোন ডিপার্টমেন্ট এর এপয়েন্টমেন্ট এর জন্যে।
শুধু ডাক্তারের এপয়েন্টমেন্ট (সিরিয়াল) ই নয়। ভারতে যাবার ভিসা প্রসেসিং, বিমানের টিকিট, হোটেল বুকিং, সবচেয়ে কম দামে কাটতে পারবেন আমাদের মাধ্যমে। এপয়েন্টমেন্ট সংক্রান্ত যেকোন তথ্য ও সেবার জন্যে কল করুন আমাদের নম্বরে।
ভেলোরের ট্রিটমেন্ট কতটা উপযোগী ও উন্নতমানের সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। ওখানে কিভাবে যাবেন, কোথায় থাকবেন, খরচ, মেডিসিন, যোগাযোগ, এপোয়েন্টমেন্টর বিস্তারিত নিয়ে লেখার চেষ্টা করবপ যাতে সকলের সাহায্য হয়। প্রসেসটা আপাত জটিল হলেও খুবই নিয়মানুযায়ী হয়।
হিন্দি বা ইংরেজীটা ঠিকঠাক জানলে সমস্যা হবার কথা নয়, তবে এখন পেশেন্টদের ৭০% ভাগই বাংলা ভাষাভাষী (বাংলাদেশ ও পশ্চিম বঙ্গের) হওয়াতে বাংলা ভাষা হলেও কাজ চলে যাবে।
এপোয়েন্টমেন্ট
এপোয়েন্ট মুলত দুই প্রকারের হয় –
- জেনারেল এপোয়েন্টমেন্ট ( জুনিয়র ডাক্তারেরা দেখেন)
- প্রাইভেট এপোয়েন্টমেন্ট ( সিনিয়ার ডাক্তারেরা দেখেন)
এখান থেকে কেউ গেলে অবশ্যই প্রাইভেট এপোয়েন্টমেন্ট নেবেন।
এপোয়েন্টমেন্ট পদ্ধতি
সাধারনত অফলাইন ও অনলাইন দুই রকমের এপোয়েন্টমেন্ট নেওয়া যায়। যেহেতু আমরা বাংলা থেকে যাচ্ছি তাই আমাদের ওখানে কোন লোক নেই ধরে নিয়ে অনলাইন এপোয়েন্টমেন্ট করাতে হবে।
অনলাইন এপোয়েন্টমেন্ট
মোটামুটি যেই হারে রোগীদের ভীড় হয়, তাতে করে কোন ডিপার্টমেন্টের প্রাইভেট এপোয়েন্টমেন্ট পেতে আপনাকে ১৫ দিন থেকে ৩ মাস অব্দি অপেক্ষা করতে হতে পারে।
অফলাইন এপোয়েন্টমেন্ট
ভেলোর এর মেইন গেইটে ঢুকলেই আপনি দেখতে পাবেন সিলভার গেইট ফর নিউ এপয়েন্টমেন্,
আপনি আপনার সমস্যাটা ওখানে জানালেই ওরা নিদিষ্ট ডিপার্টমেন্টে এপোয়েন্টমেন্ট দিয়ে দেবে। এক্ষেত্রে আপনি ৩-৩০ দিনের মধ্যে প্রাইভেট এপোয়েন্টমেন্ট পেয়ে যাবেন একপ্রকার নিশ্চিত।
জরুরীকালীন ট্রিটমেন্ট
এর জন্য আলাদা জরুরি বিভাগ রয়েছে, সেখানে যাবেন। ওরাই সব প্রসেস আপনাকে বলে দেবে।
জেনারেল এপোয়েন্টমেন্ট অনলাইন অথবা অফলাইন এ করা যায়। ১-৩ দিন এর মধ্যে এপোয়েন্টমেন্ট পেয়ে যাবেন।
কোন ডিপার্টমেন্টে যাবেন ???
আপনি অনলাইন এ আপোয়েন্টমেন্ট নিতে গেলে কোন ডিপার্টমেন্টে নেবেন সেটা জানা জরুরী, না হলে অযথা সময় ও পয়সা নষ্টের একটা ব্যাপার থেকেই যায়।
ধরুন- কানের প্রব্লেম- ই এন টি, হরমোন প্রব্লেম- এন্ডাইক্রোনোলজি, ক্যন্সার পেশেন্ট- অঙ্কোলজি ইত্যাদি।
যদি না বুঝতে পারেন তাহলে ওদের সাইটে দেওয়া হেল্পলাইনে ফোন করে জেনে নিতে পারেন। প্রব্লেম বললেই ওরা ডিপার্টমেন্ট বলে দেবে। আপনার রোগের লক্ষন অনুযায়ী ডিপার্টমেন্টের আওতায় ক্লিনিক বাছতে হয়।
রুম একোমোডেশন অথবা বাসস্থান
এখানে রুমের চাহিদা যেমন বেশি তেমন লজ ও আছে প্রচুর। ডবল বা ট্রিপল বেড এর রুম ১৫০-২০০ থেকে শুরু করে ১৫০০-২০০০ টাকা অব্দি। আপনি সি এম সি থেকে যত দুরত্ব বাড়াবেন তত লজের রেট কমতে থাকবে।
মোটামুটি ৭-৮ মিনিট হাঁটাপথের দুরত্বে আপনি ২০০-২৫০ টাকার রুম পেয়ে যাবেন। আপনি ২৪ ঘন্টা মানে একদিনের জন্য রুম বুক করে একটু খোজাখুজি করে কম দামে ভাল রুম ও দেখতে পারেন।
খাওয়া-দাওয়া
বেশ অনেকগুলো বাঙ্গালী হোটেল আছে, আপনি ৪০-৬০ টাকা/মিল হিসাবে ভাত পেয়ে যাবেন। এছাড়া সাউথ ইন্ডিয়ান খাবার ও উপভোগ করতে পারেন তবে ৩-৪ দিনের বেশি আপনার মুখে যেমন তা রুচবে না, মধ্যবিত্ত রোগীদের জন্য তা এফোর্ট করাটাও বেশ কষ্টসাধ্য একটা বিষয়।
এক নজরে সি এম সি
সিএমসি’র মেইন বিল্ডিংতিন থেকে চারটা।
১. ওপিডি বিল্ডিং (আউটডোর পেশেন্ট) – আপনাকে ডাক্তার দেখবেন মুলত এই বিল্ডিং এ। এর ৫ টা ফ্লোর এ কাজ হয় সাধারণত।
গ্রাউন্ড ফ্লোর:- এই ফ্লোর টা সমস্ত টেস্টের জন্য বরাদ্দ। blood, x-ray,urine test সহ প্রায় সব টেস্ট এখানে হয়। ডাক্তার যে টেস্টগুলো লিখে দিয়েছে, সেই স্লিপ টা নিয়ে পেমেন্ট ক্যাশ কাউন্টারে যেতে হয়। পেমেন্ট করার জন্য ক্যাশ /এ টি এম কার্ড /ক্রিস কার্ড ব্যবহার করা হয়।
পেমেন্ট করার স্লিপে লেখা থাকবে আপনাকে কোথায় কোন রুমে যেতে হবে। ধরুন, ব্লাড টেস্টেরর জন্য – G20, XRAY- G11 এই রকম।
আপনি সকাল সকাল এসে লাইনে দাঁড়িয়ে টেষ্ট গুলো করিয়ে নিন। সকাল ৬ টা থেকে কাজ শুরু হয়ে যায়। আপনাকে ৫-৫:৩০ টা থেকে লাইন এ দাড়াতে হবে তাড়াতাড়ি পেতে চাইলে।
ফার্স্ট ফ্লোর, সেকেন্ড ফ্লোর, থার্ড় ফ্লোরে বিভিন্ন রুমে বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টের প্রাইভেট ও জেনারেল ডাক্তাররা দেখেন। আপনার এপোয়েন্টমেন্ট লেটারে লেখা থাকবে আপনাকে কোথায় কোন ফ্লোরে যেতে হবে।
উদাহরণ হিসেবে
OPD Building SECOND FLOOR 210, report to MRO at 10:30am… র মানে হল আপনাকে সেকেন্ড ফ্লোর এ ২১০ নং রুম এর সামনে গিয়ে MRO COUNTER E এপোয়েন্টমেন্ট কপি টা জমা দিতে হবে সকাল ১০:৩০এর সময়। ১ ঘন্টা আগেপিছে হলেও সাধারণত সমস্যা হয়না।
ISSCC BUILDING:- এটাও OPD BUILDING এর মত গুরুত্ব পুর্ন। এখানে যেইসব কাজ গুলো হয়, নিউ এপোয়েন্টমেন্ট, রিপিট এপোয়েন্টমেন্ট, ফার্মেসী, ক্রিস কার্ড, ক্যাশ পেমেন্ট ও অবশ্যই ডাক্তাররাও দেখেন উপরের ফ্লোরগুলিতে।
নতুন এপোয়েন্টমেন্ট: সাধারণত ৪ থেকে ১০ নাম্বার কাউন্টারে নতুন আপোয়েন্টমেন্ট, টেস্ট ও অনান্য কিছুর জন্য পেমেন্ট করা হয় নগদ টাকার মাধ্যমে।
রিপিট এপোয়েন্টমেন্ট বা পুনরায় এপোয়েন্টমেন্ট নেয়া: ১১ থেকে ১৩ নাম্বার কাউন্টারে কোন ডাক্তারের পুনরায় এপোয়েন্টমেন্ট করানো হয়। এইক্ষেত্রে কাউন্টারে বললেই হবে ডাক্তার কবে দেখতে চেয়েছেন, ওরা এপোয়েন্টমেন্ট দিয়ে দেবে।
ফার্মেসী সাধারণত ৩ মাসের জন্য ওষুধ দেয় রোগীদের। ফার্মেসীতে পেমেন্ট করে ওষুধ নেবার জন্য লাইনে দাঁড়াতে হয়।
সি.আর.আই.এস.এস কার্ড
এই কার্ড টা বানিয়ে নিলে আপনার হয়রানি অনেকখানি কম হয়ে যাবে। আপানার পেশেন্ট আইডি দেখিয়ে বললেই ৪০২ নং কাউন্টার থেকে ক্রিস কার্ড বিষয়ক যাবতীয় সাহায্য করে দেবে। এই ক্রিস কার্ডে ক্যাশ বা এ টি এম ট্রান্সফারের মাধ্যমে আপনাকে অগ্রিম টাকা ভরতে হবে। তবে এ টি এম কারড ব্যবহার করাটাই তুলনামূলক ভাবে সহজ ও সময় সাশ্রয়ী। ক্রিস কার্ডের সবচে বড় সুবিধা হলো আপনাকে দীর্ঘ সময় ধরে বড় লাইনে দাঁড়াতে হবে না পেমেন্টের জন্য কারন ক্রিস কার্ডের পেমেন্ট কাউন্টার আছে cri প্রায় সব জায়গায়।
এপোয়েন্টমেন্টের তারিখ এগিয়ে বা পিছিয়ে আনা..
আই এস এস সি সি বিল্ডিংয়ে হেল্পডেস্কে লম্বা লাইন দেবেন পেমেন্ট স্লিপ নিয়ে। অনেক ভীড় হয়। ওখানে আপনার সমস্যার কথা বললেই ওরাই আপনার তারিখ পরিবর্তনের ব্যবস্থা করে দেবে।
পি.এম.আর বিল্ডিং
সাধারণত ফিজিওথেরাপি ডিপার্টমেন্ট বলা যেতে পারে। বিভিন্ন ফিজিওথেরাপির যন্ত্রপাতি, জুতা, ডুপ্লিকেট ব্রেস্ট ( সিলিকন ব্রেস্ট) এইসব জিনিসের জন্য এই ডিপার্টমেন্টে যেতে হয়। পেমেন্ট স্লিপ অথবা এপোয়েন্টমেন্ট লেটারে পি এম আর বিল্ডিং উল্লেখ থাকবে।
ওয়ার্ড বিল্ডিং
পেশেন্টদের সার্জারি ও ট্রিটমেন্টের প্রয়োজনে এখানে পেশেন্ট দের ভর্তি করা হয়। এত পরিস্কার পরিছন্ন & জীবাণুমুক্ত জায়গা হয়ত আপনার বাড়ির রুমগুলিও নয়। ডায়াগনোসিসের উপর বেশি জোর দেয়া হয়, অনেক টেষ্ট দেয়; তারপর যখন রোগ ধরা পড়ে তখনই চিকিৎসা করে।
টেষ্ট গুলি মুলত ৩ জায়গায় করানো হয়।
ওপিডি বিল্ডিং
সাধারণত বেশীর ভাগ রোগীর টেস্ট এখানেই করানো হয়। তবে বিশেষ কিছু টেস্টের জন্য যেমন USG এর জন্য ৩-৪ দিন সময়ও লাগতে পারে। তাই যখন ডাক্তারেরর সাথে কথা বলবেন ওনাকে রিকুয়েস্ট করবেন যেন আপনার টেষ্ট গুলি ALPHA CLINIC এ পাঠিয়ে দেয়।
ওনাদের একটা কলমের খোচা দিলেই আপনার ৩-৪ দিনের কাজটি ১ দিনেই হয়ে যাবে। ইমার্জেন্সী পেশেন্টদের জন্য ইমার্জেন্সী টেস্টের ব্যাবস্থা আছে, এই টেস্টগুলোর কোন রিপোর্ট আপনি পাবেন না, টেস্টগুলো হয়ে গেলে অটোমেটিক্যালি রিপোর্ট আপনার খাতায় চলে আসবে অর্থাৎ আপনার হস্পিটাল নাম্বার এবং যে ডাক্তারকে আপনি দেখাবেন সেই ডাক্তারের কাছেও চলে যাবে। তাই, সমস্যার কিছু নেই। রিপোর্ট পেতে হলে আলাদা ভাবে এপ্লাই করতে হয়।